ভিনদেশে দুর্গাপুজো
চি র ঞ্জি
ত দ রি পা
“ধারে আর ভারে হয়তো কলকাতার পুজো
থেকে পিছিয়ে কিন্তু আবেগ আর ভক্তিতে বেশ টেক্কা দেয়। বিদেশে এতো বড়ো দক্ষ যজ্ঞ করা
সহজ নয়। এরা শারদ সম্মানের জন্য লড়াই করেনা। বাঙালি নাড়ির টানে প্রতি বছর মাতৃ
আরাধনা করে। সেখানে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক মেলেনা।''
বিদেশে
দুর্গাপু্জো, কথাটা শুনে আগে লোকে
বলতো দুধের সাধ ঘোলে মেটানো।
কিন্তু সময়ের সাথে দুধ আর ঘোলের পার্থক্য
কমে যাচ্ছে। দশটা বাঙালি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে মিলিত হলে একটা দুর্গা পুজোতো হবেই।
সেই সূত্রে আমেরিকার বিভিন্ন শহরে প্রবাসী বাঙালিরা দুর্গাপুজো করে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সেখানে বাঙালি আনা কোন
অংশে কম যায় না।
শুরু থেকে বলতে গেলে পুজো কমিটির কথা
প্রথমে আসে । আমেরিকাতে পুজা কমিটি বলতে
বাঙালি অ্যাসোসিয়েসেন অফ “অমুক” নামটাই বেশি চলে, যেমন - ‘বাঙালি
অ্যাসোসিয়েসেন অফ সাউদার্ন ক্যালিফর্নিয়া’ (দিয়ারটি শহর,লস অ্যঞ্জেলাস কাউন্টি, ক্যালিফর্নিয়া রাজ্য) এর
পাশাপাশি ‘সনাতন
বাঙালি’, ‘বে
এরিয়া প্রবাসী’ (শ্যবো কলেজ, হ্যওয়াড শহর ,ক্যালিফর্নিয়া রাজ্য; এটা প্রায় ৪০ বছরের
পুরনো), প্রবাসী পুজো
নাম ও চলে। অথবা জায়গার নামেও পূজা কমিটি হয়, যেমন
- ‘নিউ ইয়র্ক পুজো অ্যাসোসিয়েসেন’,
‘ইস্ট কোস্ট দুর্গা পুজো
অ্যাসোসিয়েসেন’ ( নিউ ইয়র্ক)। ওয়েবসাইট এর নামও
হয় পুজো কমিটির নামে।
বেশির ভাগ পুজো কমিটিরই থাকে নিজস্ব
ওয়েবসাইট। বিদেশে বাঙালিদের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম উপায়। সারা বছর ওয়েবসাইট পুরানো
বছরের ছবি কাঁধে করে ঝিমোতে থাকে,
কোন হেলদোল থাকে না। পুজোর ঠিক আগে ঐ সাইটগুলো জেগে ওঠে। পুজার
নির্ঘণ্ট, স্থান আর যে শিল্পী এবারে পুজোর প্রধান আকর্ষণ
তার নাম, ছবি দিয়ে। অনলাইনে সদস্যও হওয়া যায়।
এবার আসি প্রতিমাতে। অনেক
এক্সপোর্ট কোম্পানি আছে যারা এক চালা,
তিন চালা, পাঁচ চালা প্রতিমা কলকাতা
থেকে পোঁছে দেয় আমেরিকার বিভিন্ন শহরে। মাটি থেকে সুরু করে পেপার পাল্প, থার্মকল, ফাইবার গ্লাস এর মূর্তি পাঠানো হয়।
বিদেশে বিসর্জনের অনেক ঝামেলা। কিছু পুজো
কমিটি প্রতিমা বাক্স বন্দি করে রেখে দেয়। পরের বছর আবার সেই মূর্তি পুজো করে।
পুজোগুলো
হয় স্কুলের মাঠে বা কমিউনিটি হলে। এর জন্য পুজো
কমিটিকে ভালো রকম ভাড়া গুনতে হয়। পুজোর চারদিন আসে পাশের থেকে সব বাঙালি
জড়ো হয় পুজো মণ্ডপে ।বাঙালি বলতে পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশ দুই। বাঙালি পোশাকে পুজো
প্রাঙ্গণ ভরে যায়, দেখে মনে হয়না বিদেশে আছি। বিদেশে, বাঙালি
প্রমীলাদের শাড়ি আর গহনার সম্ভার সারা বছর
ম্লান হয়ে থাকে, জেল্লা দেখা যায় পুজোর চারদিন।
কথায় আছে কালচারাল বাঙালি,
বিদেশে বাঙালি কালচার বজায় রাখতে একটা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা তো
রাখতেই হয়। সব পুজো কমিটি চেষ্টা করে
কলকাতা, মুম্বাই থেকে বিখ্যাত শিল্পীদের নিয়ে
সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা আয়োজন করতে, সপ্তমী থেকে নবমী। যে
এলাকায় ঐ দুর্গাপুজো হচ্ছে সেখানকার বাচ্চাদের (বাঙালি) নিয়েও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
হয় যাদের জন্ম আর বড় হওয়া এদেশেতে। শতকরা ১০০ ভাগ বাঙালি সুবাস। সেও
ইন্দ্রিয়ের জন্য এক দারুণ অভিজ্ঞতা। (আমেরিকার অনেক
শহরে ভারতীয় নৃত্য শেখানোর স্কুল আছে)।
বাঙালি আর খাওয়ার কথা না বললে পুজোর
গল্প পূর্ণ হয়না । খিচুড়ি ভোগ তো থাকেই, পুজো প্রাঙ্গণে অনেক ছোটো ছোটো স্টল বসে, এখানেও কষা মাংস,
এগ রোল থেকে শুরু করে মটির ভাঁড়ে চা, সবই
পাওয়া যায়। এছাড়া কিছু স্টল থাকে শাড়ি, গহনা ইত্যাদির
জন্যও।
সব কিছু মিলে আমেরিকাতে পুজো বেশ
জমজমাট। ধারে আর ভারে হয়তো কলকাতার পুজো থেকে পিছিয়ে কিন্তু আবেগ আর ভক্তিতে বেশ
টেক্কা দেয়। বিদেশে এতো বড়ো দক্ষ যজ্ঞ করা সহজ নয়। এরা শারদ সম্মানের জন্য লড়াই করেনা। বাঙালি নাড়ির টানে প্রতি বছর মাতৃ
আরাধনা করে। সেখানে লাভ-ক্ষতির অঙ্ক মেলেনা।
তবে এখানের পুজোয় যেটা পাওয়া যায়না
সেটা হলো ছোটবেলাকার বন্ধুদের সাথে মণ্ডপে বসে আড্ডা, পরিবারের বাকি সদস্যদের অনুপস্থিতিও অন্তরে কোথাও নাড়া দেয়। তাই স্কাইপ, ফেসবুক আর ভাইবারই মুস্কিল আসান। মন ভার করে লাভ নেই, মা আসছেন। পুজো ভালো কাটুক।
0 comments:
Post a Comment