Wednesday, July 9, 2014

দেব নারায়ণ সতপতি

বাড়ি ফিরতে রোজই রাত হয়লাস্ট ট্রেনে তারই মত সহযাত্রী থাকে কজনরোজ এক সাথে গেলে যেমন হয় সম্পর্ক গড়ে ওঠে একটাকোন রাতে কেউ না এলে একজন না একজন কথাটা তুলবেই- সমর দা কে দেখছি নাবিশেষ কাউকে উদ্দেশ্য করে বলতে হয় নাউত্তর টা যার কাছে থাকে সে ঠিক বলে দেয়- গতকাল বলছিল ছেলের শরীরটা খারাপসবাই জেনে যায় সমরের ছেলের জ্বরপ্রতিরাতে ওরা তাস খেলেরামিবাজি রেখেই খেলা হয়পরিমাণ নগণ্যতবুও ওদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী তাপসঅদ্ভুত ভাবে প্রায় প্রতিদিনই জেতে
হাতের তাসগুলোর মধ্যে হরতনের বাদশাটার কোন জোড় নেইসেটাই ফেলে দিতে চাইছিল তাপসফেলতে গিয়েও মনে হল হেমন্ত এটা খাবেহরতনের বাদশার বদলে রুইতনের নহলাটা ফেলতে গিয়ে সে বলে- সমরদার ছেলেটা অনেক দিন ধরে ভুগছেভালো ডাক্তার দেখাচ্ছে না কেনসমরের সঙ্গে একই ষ্টেশনে নামে হারাধন সমাজপতিসে বলল- আজ নিয়ে গেছে বাকুড়ায়ছেলটার না হেভী বুদ্ধিমাধ্যমিকে ৮৯ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। -আরে সে তো সবাই জানেমিষ্টি খাওয়াল না সমর দা সেবারতাপস বলে উঠেএই দলের মধ্যে কেউ জানেনা তাপসও মাধ্যমিকে ৭৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলপরের বাড়ি কাজ করা মায়ের সাধ্য ছিল না আর পড়ানোরসুতরাং লাল সবুজ পলিথিনে মোড়া লজেন্স নিয়ে ট্রেনের কামরায় শুরু হল অন্য জীবনসেও প্রায় আট বছর হয়ে গেলঅকারণ বিষণ্ণতায় ভরে যায় তাপসের মনভুল করে হরতনের বাদশা ফেলে দেয় সেক্ষিপ্র গতিতে হেমন্ত বাদশাকে তুলে নেয়এবং ডিক্লেয়ার করেপরের ষ্টেশন এসে যায়হারাধন নামছেতাপস মুখ বাড়িয়ে বলে- ছেলেটার খবর টা নিয়ো দাদা
কদিন পরের কথারাতের শেষ লোকালের সাত নম্বর কামরার পরিবেশ বিষণ্ণরামি খেলাও বন্ধআসলে একটা খারাপ খবর এসেছেসমরের ছেলের লিউকেমিয়া ধরা পড়েছেসবাই চুপ করে বসেওরা কেউ কারো আত্মীয় নয়প্রতিবেশীও নয়শুধুই রাতের শেষ লোকালের সহযাত্রীএকটার পর একটা ষ্টেশন পার হচ্ছে । - ডাক্তার বলেছে ভেলোরে নিয়ে যেতেনীরবতা ভেঙে বলল হারাধনঅনেকক্ষণ চুপ থাকার পর হেমন্ত বলল- সে তো অনেক খরচের ব্যাপার। -আমরা কি কিছু সাহায্য করতে পারব না, তাপস বলে ওঠে- আর কিছু না হোক আমরা এতদিন ধরে সহযাত্রী
কিন্তু আমরা কি ভাবে ...মানে তুই তো জানিস তাপস, হারাধন বলেকত টুকুই বা রোজগার আমাদের...,হা হা কারের মতই শোনায় তার গলা      -কি বলো হারাধান দাঅত ছোট ভাবো কেন নিজেদের এসো আমরা একটা যৌথ ফান্ড গড়েতুলিশুরুটা না হয় আমিই করবো পনের হাজার টাকা দিয়েতোমরা তোমাদের সাধ্যমত দেবে-পনের হাজারএত টাকা তুই কোথায় পাবি?- হেমন্ত শুধোয়               -আরে হেমন্ত দাএতদিন তোমরা রামিতে কতটাকা হেরেছো আমার কাছে খেয়াল আছে?  সব জেতা টাকা আমি জমিয়ে রেখেছি,বলে যায় তাপস- একটা ভালো কাজে লাগাবো বলেএটা কি ভালো কাজ নয়!
তার গলাটা একটুও কাঁপছিল নামুখটা একটু চকচক করছিল

 হেমন্তের কেন কে জানে  মনে হচ্ছিল কোন হরতনের  বাদশা ওদের সামনে বসে  আছে


0 comments:

Post a Comment