অনেক বড়ো শহর! কতো উঁচু
উঁচু বাড়ি,
কত কত মানুষ,
বাস-ট্যাক্সি-মোটরবাইক, মিষ্টির দোকান-হোটেল! সদর
শহরে দাদার বদলি হতেই গ্রামের বাড়ি ছেড়েছিলাম। রেল কোয়ার্টারে বাবার কাছে সবাই একসাথে থাকবো,শহরে পড়াশোনা করবো। হলুদ আলোর তলা দিয়ে হেঁটে গেছিলাম, চাকা-লাগানো বাক্স আর ভারী ব্যাগ কাঁধে নেওয়া দাদার পেছন পেছন। দাদার বাঁ-হাতটা ধরে বোন
ওর প্রিয় পুতুলটা নিয়ে নিয়ে খেলতে খেলতে গেছিল।
রেল কলোনি থেকে সামান্য
দূরের একটা ইস্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল আমাকে। আমি ওখানে কারোর সাথে কথা বলতাম না। রাতে খাওয়া-দাওয়া, প্রার্থনার পর দাদার পাশে শুয়ে মায়ের সাথে কথা বলতাম চুপচাপ। ভিজে বালিশে কখন ঘুম
আসতো সকালে অবাক হয়ে ভাবতাম। বিকেলে ইস্কুল থেকে ফিরে অন্যদের খেলা
দেখতাম দূর থেকে। এভাবেই বেশ কিছুদিন চলার পর একদিন আমায় ডেকেছিল একজন,
খেলার জন্য। খেলেছিলাম। আস্তে আস্তে যতই ওদেরকে চিনেছিলাম, মজা বেড়ে
গেছিল। বাবা বলেছিল রেল কলোনি’র ওদিকটাতে মোটা লোহার
পাত লাগানো সীমানার
ওপারে না যেতে। ওদিকে নাকি “ভয়ঙ্কর ভূতেরা” থাকতো! আমি যাইনি কোনোদিন,
খেলা শেষ হলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতাম।
একদিন স্কুল থেকে বাড়ি
ফেরার সময় দেখেছিলাম, কয়েকটা অচেনা ছেলে
মেধার সাথে খুব মারামারি করছে। মেধা আমাদের সাথে খেলতো, তাই আমি ঐ
ছেলেগুলোর সাথে মারামারি করেছিলাম। ছেলেগুলো চলে গেলে আনন্দ
হয়েছিল, তবে
বাবার কাছে খুব বকুনি খেয়েছিলাম। মেধা আমার খুব ভালো বন্ধু
হয়েছিল। ও
প্রায়ই বাদাম নিয়ে আসতো আমার জন্য। একদিন ও আমাকে ওদের বাড়ি
নিয়ে যেতে
চাইলো। আমি গিয়েছিলাম কিছু রাস্তা, কিন্তু লোহার পাতের
সীমানার ওপারে
যেতে চাইনি। ও কারণ জানতে চেয়েছিল। বাবা যা বলেছিল সেটা ওকে বলতেই ও খুব
হেসেছিল।
এরপর বেশ কয়েকবার ইস্কুল
ফাঁকি দিয়ে ওদের বাড়ি গেছি। বেশ আলাদা
জায়গায় ছিল ওদের বাড়িটা। কোলাহল-ভিড়, কেমন একটা গন্ধ, কেমন সব আলাদা কথার
মানুষ। মেধার মা খুব ভালো। আমার সাথে কথা বলেছিল অনেক, আমিও অনেক কথা
বলেছিলাম। দাদা এটা জানতে পেরে খুব বকেছিল আমায়। কেন বুঝিনি। তারপর আরো
একবার গেছিলাম মেধার মায়ের কাছে। এবার বাবার হাতে খুব মার
খেয়েছিলাম।
তবুও …! শেষমেশ আমাকে ভর্তি করে দেওয়া হল বোর্ডিং স্কুলে, “ভালো মানুষ
হওয়ার জন্য”।
0 comments:
Post a Comment